logo
মেনু
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • সারাবাংলা
    • ঢাকা
    • চট্রগ্রাম
    • খুলনা
    • রাজশাহী
    • রংপুর
    • বরিশাল
    • সিলেট
    • ময়মনসিংহ
  • রাজধানী
  • রাজনীতি
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • অর্থ-বাণিজ্য
  • বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  • লাইফস্টাইল
  • আইন-আদালত
  • শিক্ষাঙ্গন
  • অন্যান্য...
    • অন্যরকম
    • চাকুরী সংবাদ
    • মুজিব বর্ষ
    • স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
    • সাক্ষাৎকার
    • প্রবাসের খবর
    • নারীমেলা
    • ওপার বাংলা
    • জীব বৈচিত্র্য
    • ভ্রমণ
    • শিল্প-সাহিত্য
    • মতামত
    • বিশেষ সংবাদ
    • চাকুরী সংবাদ

সম্পাদকীয়
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

Aug 27, 2020
Share
Tweet
banglanewspaper

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী*

সপরিবারে নির্মম হত্যার প্রায় ২৯ বছর পর এবং বিএনপির শাসনামলে ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল মোতাবেক ১লা বৈশাখ ১৪১১ বঙ্গাব্দে বিবিসি বাংলা বিভাগের সকালের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি অভিধায় ভূষিত করে। ফেব্রুয়ারী মাসের ১১ তারিখ থেকে মার্চের ২২ তারিখ পর্যন্ত সারাবিশ্বের হাজার হাজার বাঙালি শ্রোতা চিঠি, ইমেইল এবং ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাদের মতামত দিয়েছে। শ্রোতাদের মতামতের ভিত্তিতে দেখা যায় শীর্ষ ২০ জনের মধ্যে ক্রমের শেষাংশ থেকে আছেন যথাক্রমে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জিয়াউর রহমান, অতীশ দীপংকর, স্বামী বিবেকানন্দ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বায়ান্নের ভাষা শহীদগণ, ড. অমৃত্য সেন, সত্যজিত রায়, লালন শাহ, মীর নিসার আলী তিতুমীর, রাজা রামমোহন রায়, মাওলানা ভাসানী, ঈশ্বরচন্দ্র, বিদ্যাসাগর, জগদীশ চন্দ্র বসু, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, সুভাস চন্দ্র বোস, আবুল কাশেম ফজলুল হক, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচনের ভিত্তি নিয়ে কিছু সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী বা শিক্ষাবিদ, ঐতিহাসিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ যেসব মন্তব্য করেছেন বিবিসি তাদের প্রচারে ঐসব বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের মন্তব্য তুলে ধরেছেন। তাদের একজন জাপান থেকে মনিকা রশিদ বলেছেন, ‘আজ আমরা সারাবিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যে যেখানেই বসে যা কিছু করছি যা বলছি তার কোনটাই সম্ভব হতো না যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমাদের ইতিহাসের সবচে প্রয়োজনীয় সময়টাতে না পেতাম। তিনিই বাঙালি জাতিকে প্রথম বোঝাতে সক্ষম হন যে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সর্বোপরি বাঙালি জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইলে রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে হবে। মৃত্যুভয় বা ক্ষমতার লোভ কোনও কিছুই তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী মনোভাবকে দমিয়ে দিতে পারেনি। ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রণী এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপায়ণ করেন। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ মন্ত্রের মতো সমগ্র বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর একটি সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে খালি হাতে লড়াইয়ে নামতে এবং সেই লড়াইয়ে জিততে উদ্বুদ্ধ করেছিল।’

তার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে ঢাকা থেকে শহিদুল হক ‘মুজিবের ৭ মার্চের কন্ঠস্বরকে ঐশী কন্ঠস্বর’ বলেছেন এবং তার ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ সাত কোটি মানুষকে ঐদিন একসূত্রে গেঁথেছিলেন। এই একই সূত্রে গাঁথা ‘মানুষগুলোর পরিচয় না মুসলমান, না হিন্দু, না বৌদ্ধ, না খ্রীষ্ঠান- তারা সবাই ছিলেন বাঙালী।’ বৃটেনের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিনাত হুদা। জিনাত হুদা আরও বললেন বাঙালি জাতির স্বপ্ন, আকাঙ্খা, সংগ্রাম আর সফলতার রূপকার হচ্ছেন শেখ মুজিব। এই জাতির ‘ভিত্তি হচ্ছে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি। মুজিব তার অসাধারন নেতৃত্বে আবহমান শাশ্বত বাঙালির সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেন ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ‘মুজিব, তাঁর অসাধারন প্রজ্ঞা, মেধা, ত্যাগ, অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে এই (স্বপ্ন) আকাঙ্খাকে রূপায়িত করেছেন।’

প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন ‘আমি তার নেতৃত্বের তিনটি বড় গুন দেখি। প্রথমত, তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন, দৃঢ়চেতা ছিলেন এবং আপোষহীন ছিলেন, যার অভাব আমরা আমাদের দেশের নেতত্বে বারবার দেখেছি। অন্যরা আপোষ করে ফেলেন, ক্লান্ত হয়ে যান এবং ঐভাবে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যান না। দ্বিতীয়ত, যে বৈশিষ্ট্য আমরা দেখেছি তার নেতৃত্বে সেটা হলো এই যে, তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রে প্রধান দ্বন্দ্ব কি সেটাকে খুব সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। তৃতীয়ত হচ্ছে যে, ব্যক্তি হিসেবে তার মধ্যে অসাধারন গুণ ছিল, তার আকর্ষনী শক্তি ছিল যাকে ক্যারিশমা বলে, তিনি জনগণকে বুঝতেন, জনগণের সঙ্গে মিশতে পারতেন, তাদের ভাষা জানতেন, তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন। কাজেই আমরা তার মধ্যে দেখবো যে তার মধ্যে বীরত্ব ছিল এবং নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা ছিল যার একটা সমন্বয় ঘটেছিল একটি অসাধারন চরিত্রে।

রাজনৈতিক কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়িত করতে হেনরী কিসিঞ্জারকে টেনে আনেন যিনি বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সাথে তুলনা করলেও বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন ‘ইউ হ্যাভ ডিফাইড হিস্ট্রি’। এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দ্বিমত পোষণ করলেও তিনি মনে করেন ‘বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্রীয় সত্তার যে উদার্য উদ্ভব সেটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে অনুঘটক নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছিলেন। আনোয়ার হোসেনও কিসিঞ্জারের উপলব্ধির সমালোচনা করেছেন। শেষকালে কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেনের সাথে সহমত পোষণ করেন এবং কিসিঞ্জারের অজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কামাল হোসেন বলেন ‘সেই পঞ্চাশের দশক থেকে তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেন। বাংলাদেশের ধারনা তার মধ্যেই সৃষ্টি হয়ে এসেছে। তার একটা দূর লক্ষ্য সামনে ছিল। সেই দূর লক্ষ্যটাকে সামনে এনে জনগণকে অনুসারী তৈরী করেছিল এবং জনগনের ভাবনা চেতনা অভিলক্ষ্য স্বপ্ন তিনি ধারণ করতে পেরেছিলেন। তিনি সেই ১৯৫৯ সালে তার লক্ষার্জনের সময়সীমা দশ বছরে বেঁধে দিয়ে ৬ দফা দিলেন আর ৬৯ এর আন্দোলনে হলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বা আনোয়ার হোসেনের মতে পপলিষ্ট লিডার।

আতাউস সামাদ এর বক্তব্যে দেখা যায় “শেখ সাহেব সাহস করে ছয় দফা ঘোষণা করেন, তাও করলেন তিনি লাহোরে। পশ্চিম পাকিস্তানে একটি সম্মেলনে গিয়ে তিনি এই ছয় দফা ঘোষণা করলেন। যার ফলে ওনাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে যে মামলাটি হয় তাতে এক নম্বর আসামি করা হলো। তারপর ওনাকে ছাড়ানোর জন্য আন্দোলন হলো যেটা ছাত্রদের ১১ দফায় রূপ নিল। এবং ওইখান থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হলো। ১৯৭০- এর নির্বাচনে শেখ মুজিব তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়টিকে মূল বক্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।

সাংবাদিক আতাউস সামাদ আরও বলেন উনি নির্বাচনী যে প্রচারগুলো করেছেন তার অনেকগুলো জায়গায় আমি তার সঙ্গে গিয়েছি। উনি সবখানেই ছয় দফার কথা বলতেন এবং ছয় দফা না হলে একটা আঙুল তুলে বলতেন আমার দাবি এই’ অর্থাৎ দেশ স্বাধীন করতে হবে। সর্বোপরি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তিনি এমন একটা বক্তৃতা দিলেন যা সবার মন ছুয়ে গেল, সবাই ওনার নির্দেশ মানতে লাগলো এবং ওনার নামেই স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে।’

তিনি ভাষা আন্দোলনে সূচনা লগ্নে ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনের একটা যৌক্তিক পরিণতি হিসেবে ভাষা ভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এদিক দিয়ে এই অঞ্চলে তো বটেই বিশ্বে তিনি একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব।

তিনি সকল ধর্মীয় সত্ত্বাকে একত্রিত এবং সমন্বিত করে একটি অভিন্ন জাতিসত্ত্বায় রূপান্তর ঘটান। এমনকি শোষনহীন, বৈষম্যহীন এক সমাজ ব্যবস্থার ছক আঁকেন।

তিনি একটি সমাজে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্বাধীনতার আন্দোলন এবং পরিশেষে স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপান্তর ঘটান এবং চূড়ান্ত ফল স্বপক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হোন। তিনি ছিলেন প্রতিহিংসা বিবর্জিত, মানবতাবাদী ও শান্তি প্রিয় নেতা। তাই বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাকে জুলিও কুরি পুরস্কার প্রদান করেন। তবে শান্তির পথে তার অবদানের জন্যে তিনি পেতে পারতেন নোবেল শান্তি পুরস্কার। বিশ্ব শান্তি পরিষদ সর্বাগ্রে পদক্ষেপ না নিলে তিনিই হতেন একমাত্র বাঙালি রাজনীতিবিদ যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হতেন।

এ’সবের মানে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু বাঙালির ব্যক্তিক পরিচিতি ও স্বাতন্ত্রবোধের জনক। তিনিই বাঙালি জাতিকে প্রথম বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে বাংলাদেশের সংস্কৃতি সর্বোপরি বাঙালি জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে রাজনৈতিক ভাবে স্বাধীন হতে হবে এই দুরুহ লক্ষার্জনে। 

তার আগে কেউ বাঙালিকে একই সূত্রে গেঁথে নিতে পারেননি-  এ’কাজ আর কেউ কোনদিন করতে পারবে বলে আমি অন্ততঃ বিশ্বাসী নই। আমার সাথে কন্ঠ মিলিয়েছেন অলি আহাদ, তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মতো ব্যাডা এই মুলুকে জন্ম নেয়নি, আর কোনদিন জন্ম নেবেওনা।’ ওলি আহাদ এ’কথা যখন বলেন তখন তার তথাকথিত জাতীয়তাবাদীদের কন্ঠে ভিন্ন কথা, বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার জঘন্য প্রয়াস বিংশ শতাব্দী শেষপাদে বললেও আর বিবিসি কর্তৃক ২০০৪ সালে একটি সর্বসম্মত অভিধা দিলেও আমাদের অবিমূশ্যকারিতা বা অজ্ঞতা আমাদের মন ও মনন চেপে বসে আছে? আমি অনেক রাজনৈতিক নেতাকে বলতে শুনেছি ‘কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’ অথচ তারা ছাত্র জীবন থেকেই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে অস্বীকার করে আসছিলেন। এ’সব নেতার অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে শতাব্দীর মহানায়ক কিংবা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ নেতা বলে গলা ফাটিয়ে বক্তৃতা দিতে শুনেছি। তারা যখন এ’সব কথা বলছিলেন তখন আমাদের মতো কলাম লেখক, গবেষক ও বঙ্গবন্ধু প্রেমিক বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী হিসাবে চিহ্নিত করে আসছিলেন। শুধু লেখায় নয়, একবার জাতীয় যাদুঘরে এক বক্তব্যে আমি বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বলে অভিহিত করলাম। সেটাও নব্বই দশকের প্রথম ভাগের কথা। যাদুঘর থেকে বের হবার সাথে সাথে এক ব্যক্তি আমার পিছু নিলেন। তিনি আমাকে থামিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, ‘আপনিতো বললেন বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, তাহলে নেতাজী সুভাস বোস বা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্থান কোথায়? আমি বললাম,“রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন কবি, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তাই তার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তুলনা না করে রাজনীতিবিদের সাথে রাজনীতিবিদের তুলনা করতে গেলে নিঃসন্দেহে নেতাজী সুভাস বোস এর সাথে বঙ্গবন্ধুর তুলনা চলে আসে’। ‘সুভাস বোস বাঙালীর চেয়ে ভারতবাসীর মুক্তির আন্দোলন করেছেন এবং সশস্ত্র পন্থায় ভারতকে স্বাধীন করতে প্রয়াসী ছিলেন। কিন্তু তার প্রয়াসের অন্তিম ফলটা কি ?

‘১৯৪৭ সালে অখন্ড ভারত বিভক্ত হয়েছে, স্বাধীন হয়নি। ভারত বিভক্তিতে বাঙালিদের পরাধীনতার জিঞ্জির আবার নতুন করে পরতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এ কারনেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি যিনি বাঙালিদের মনে ও চেতনায় স্বাধীনতার স্পৃহা জাগিয়ে ক্ষান্ত হননি তিলে তিলে তিলোত্তমা গড়ার সংগ্রাম ও লড়াইয়ের মাধ্যমে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তদুপরি তিনি এমন একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন যার পরিচিতি ভৌগোলিক সীমারেখায় শুধু আবদ্ধ নয়; তার আদর্শিক ভিত্তি হচ্ছে মানবিক, গণতান্ত্রিক সাম্য ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।’ আমার সেদিনের কথায় ভদ্রলোক সন্তুষ্ট হতে পেরেছিলেন কিনা আমার বোধে আসেনি। হয়তো তাকে আর বেশ ক’টি বছর অপেক্ষায় থেকে বিবিসির ভাষ্যকারের মুখে শুনতে হয়েছিল “বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী”। বিবিসির জরিপ শেষে তিনি আমার কথাটি মেনে নিয়েছিলেন না জাতীয়তাবাদী আঁতেলদের মতই কাঁধ দিয়ে ঠেলে বলে যাচ্ছিলেন যে শেখ মুজিব কিসের বঙ্গবন্ধু, কিসের জাতির পিতা, কিসের শতাব্দী মহানায়ক বা শ্রেষ্ঠ নেতা।

বিবিসি’র জরিপে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হওয়ায় বঙ্গবন্ধু পরিবারে জীবিত দু’সদস্য, দু’কন্যা জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা জরিপে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রোতা এবং বিশ্বের সকল বাঙালির প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ১লা বৈশাখ বিবিসিতে জরিপের ফলাফল প্রচারের পরপরই এক বিবৃতিতে বলেন, সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেয়ার গৌরব সমগ্র বাঙালি জাতির। শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে তার নিজস্ব ভাষা ছিল, কৃষ্টি ছিল, ঐতিহ্য ছিল। ছিল না একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, বীরের জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজস্ব পরিচিতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালিকে দিয়েছিলেন জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানেই বঙ্গবন্ধুর সার্থকতা, তার শ্রেষ্ঠত্ব।

তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধারণ করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্বপ্নকে। বাস্তবায়িত করেছিলেন তিতুমীর, সূর্যসেন, নেতা সুভাস বসু, শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানীসহ মুক্তিকামী বাঙালির আকাঙ্খাকে। তাঁর নেতৃত্বেই পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গেছিল বাঙালি জাতি।

তারপর থেকে আমার মনে হয় না শেখ হাসিনা কখনও তাকে শতাব্দীর মহান নেতা কিংবা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ নেতা বলেছেন। অথচ তারই সাথে একই মঞ্চে উপবিষ্টরা তাকে কখনও শতাব্দীর নেতা, সহস্রাব্দের নেতা নির্দ্বিধায় বলে যাচ্ছেন; নেত্রী ভাষনে বলছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা, আর সঞ্চালক বলছেন ‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ নেতা’, বাংলাদেশ বেতার হয়তো বলছে ‘বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা’ আর টেলিভিশনে বলছে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ নেতা’। এক ঐতিহাসিক তাকে বঙ্গবন্ধু বলতে কুণ্ঠিত, আর একজন বলছেন তিনি বঙ্গবন্ধু ও শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ নেতা। এক উপাচার্য সেই ১৯৯৪ সাল থেকে তাকে পরিচয় করিয়ে আসছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে আর এক উপাচার্য বলছেন তিনি শতাব্দীর মহান নেতা। এক বুদ্ধিজীবি বলছেন তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি আর একজন বলছেন সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের আপন স্বার্থে তাঁকে এই অভিধায় অভিহিত করছেন যা মুষ্টিমেয় বাঙালীর মন্তব্য নির্ভর। কেউ বলছেন কলকাতা বা ভারতের বাঙালিদের মতামতে তাকে শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে অভিহিত করেছে, এটা সম্ভব কেমন করে হোল? তারা কি বিচার বিশ্লেষন ভুলে তা করেছেন? তারা নেতাজী আর বঙ্গবন্ধুর ফারাকটা বুঝেছেন। বাংলাদেশী এক আঁতেল বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কারনেই শেখ মুজিবের নাম সামনে এসে গেছেন, তাই তদানিন্তন সরকারকে দিয়ে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের স্থানান্তর সহ নাম বিভ্রাট সৃষ্টি করেছে। এ’সব বিতর্ক শুধুমাত্র বেকার মস্তিষ্কের বৃথা আস্ফালন, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাহীনতা ও বিভ্রান্তির সূতিকাগার। তাই আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধুকে আমরা জাতির পিতা বলতে পারি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বলতে পারি, কিন্তু তাকে একই সাথে শতাব্দীর মহান নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলতে পারিনা।

তিনিই বাঙালিদের এমন এক রাষ্ট্র উপহার দিলেন যার ভিত্তি হচ্ছে সত্যতা, সমতা ও মানবিকতা। নিশ্চয়ই বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত করতে ন’মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের প্রয়োজন হয়েছিল কিন্তু তার আদর্শিক ভিত্তি তথা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র বাঙালির উপলব্ধি ও চেতনায় প্রথিতকরণে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার প্রয়োজন ছিল। ন’মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের বহু কারণ রয়েছে। অন্যতম কারন হচ্ছে বাঙালির নির্ভুল উপলব্ধি যে পাকিস্তান কাঠামোতে তাদের বহু কাঙ্খিত ও লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন অসম্ভব।

স্বাধীনতা ও মুক্তি বাঙালির বাঞ্চিত ও কাঙ্খিত হলেও বঙ্গবন্ধুর লক্ষাভিমুখী ও কৌশলী নেতৃত্বই এটাকে বাস্তবায়িত করেছে। পাকিস্তান অর্জনের আগেও বাঙালির দেশ বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা দৃশ্যমান ছিল কিন্তু বহুমুখী চক্রান্তের কারণে তা ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট অলীক স্বপ্ন বলেই প্রতীয়মান হয়। তবে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা প্রসারের উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি উন্মোচন হতে থাকে। ১৯৪৮ সালে ক্ষীণভাবে এবং ১৯৫২ সালে সরবে স্বায়ত্বশাসন বা স্বাধিকারের দাবী উচ্চারিত হয়। ১৯৫৪ সালে নির্বাচন পরবর্তী বাস্তবতার আলোকে ১৯৬১ সালের দিকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আহ্বানসহ একটি লিফলেট বিলি করেন। ১৯৬১ সালেই সমমনা রাজনীতিবিদদের কাছে এই ব্যাপারে সহায়তা কামনা করেন। নিয়মতান্ত্রিক বিচ্ছিন্নতার কৌশল হিসাবে ৬ দফাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান ভিত্তিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে স্বাধীনতার দাবীকে সর্বজনীন করেন, যা পাকিস্তানীরা প্রতিহত করলে অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবে ১৯৭১ সালে যৌক্তিক পরিণতি লাভ করে।      

এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অনেকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও শেখ মুজিবের অনন্য নেতৃত্বই বাঙালির আশা-আকাঙ্খাকে সর্বাধিক ব্যঙ্গময় করে তোলে। নিজের আকাঙ্খা ও আকুতিকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে ৫৪ হাজার বর্গমাইল ভূখন্ডের সকল মানুষের সাধারণ আকাঙ্খা ও আকুতিতে পরিণত করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণায়। জীবনের পথ চলতে তিনি কারো কাছে ছিলেন খোকা মিয়া, কারো কাছে মুজিব, কারো কাছে মুজিব ভাই, কারো কাছে স্রেফ শেখ সাহেব। এই শেখ সাহেবই ৬ দফা পেশের পর বঙ্গশার্দুল হিসাবে পরিচিতি পেলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হিসাবে মৃত্যুর দোর গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে ১৯৬৯ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত হলেন আর ১৯৭১ সালে তিনি হলেন জাতির পিতা। ২০০৪ সালে বিবিসি পরিচালিত শ্রোতা জরিপে তিনি নির্বাচিত হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিতে।

তাই, আমাদের উচিত হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় তাকে শুধুমাত্র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে অভিহিত করা, ভুলেও তাকে শতাব্দীর মহানায়ক বা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি না বলা। তাতে নতুন প্রজন্ম বিকৃত বা বিভ্রান্তিকর ইতিহাস থেকে মুক্ত হবে এবং ভবিষ্যতে ইতিহাস বিকৃতির উৎসমুখ নির্বাসিত হবে।

 

*অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর উপাচার্য।

সহায়ক গ্রন্থঃ শেখ মুজিব থেকে জাতির পিতা; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে কিছু ঘটনা ও রটনা।’ শেখ রেহানা সম্পাদিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

banglanewspaper
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: কেমন করে বিজয় এলো
banglanewspaper
'করোনায় যারা পথে বসেছে'
banglanewspaper
উচ্চ মাধ্যমিকে ওপেন বুক পরীক্ষা ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা’র উমেদারি
banglanewspaper
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
banglanewspaper
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা: একজন রাজনীতিকের প্রতিচ্ছবি
banglanewspaper
করোনা ও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম
banglanewspaper
কোরবানী ও কিছু প্রাসঙ্গিক কথা
banglanewspaper
জাহানারা ইমামের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির একটি খতিয়ান
banglanewspaper
জাহানারা ইমামের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির একটি খতিয়ান

প্রধান খবর

  • সর্বশেষ
  • আজকের জনপ্রিয়
23:57

তবুও সতর্ক তামিম

23:57

প্রজ্ঞাকে পেলেন সালমান খান

23:56

রাশিয়ায় পুতিন বিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ

23:55

এশিয়ার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড মাদক সম্রাট’ আমস্টারডামে গ্রেফতার

23:54

শেষ দিনগুলোয় ট্রাম্প যে ভয়াবহ পরিকল্পনা করেছিলেন

23:54

বাইডেনের পুত্রবধূ হলে...

23:53

বিস্ফোরণের ১৪ দিন পর খনি থেকে ১১ শ্রমিক উদ্ধার

23:52

পুতিনবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল রাশিয়া, আটক ৩০০০

23:52

বাইডেন-জনসনের ফোনালাপে যেসব কথা হলো

23:50

চার বছরে ট্রাম্পের মিথ্যার রেকর্ড!

bdnewshour24.com
West Panthopath, Dhanmondi
Dhaka 1209, Bangladesh.
For News: bdnewshour24@gmail.com
For Adds: bdnewshour24@gmail.com
For Contact: 01745-052651
DMCA.com Protection Status bdnewshour24.com প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি
© 2016-2017. All Rights Reserved. Powered by banglanewspaper CIS