
আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর(গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ রিকশার সিটের পাশেই এক পা'য়ে হাঁটার জন্য ক্রাচ রাখা। জীবিকার অন্বেষনে হন্যে হয়ে চলছেন এক সড়ক থেকে আরেক সড়কে। থাকেন সরকারী খাস জমিতে। রোদ, বৃষ্টি আর ঝড়ের আঘাতে কোনো মতে কুঁড়ে ঘরে সন্তানসহ রাত্রি যাপন। নতুন ঘর করতে গেলেও দেখা দেয় নানা প্রতিবন্ধকতার।
কর্মস্থলে আকস্মিক দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়েছেন। একই সাথে এক হাতের আঙ্গুল ও অন্য পায়ের হাড়ে দেখা দেয় মারাত্মক সমস্যা। তবুও জীবন যুদ্ধে হার মানেননি তিনি। বাঁচার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি না করে রিকশা চালিয়ে রোজগারের আপ্রাণ চেষ্টায় গাজীপুরের শ্রীপুরের আব্দুল জলিল হোসেন (৫০)।
১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সড়কের পাশে বসে জীবিকা ও জীবন সংগ্রামের অজানা সব কথা হয় তার সাথে। আব্দুল জলিল উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের বিন্দুবাড়ী গ্রামের মৃত আঃ মজিদের ছেলে।
নিজের জীবনের কথা গুলো চোখের টলমল পানিতে মিশিয়ে আব্দুল জলিল হোসেন জানান, অভাবের সংসারে রোজগারের জন্য সব পরিশ্রমের কাজই করতেন তিনি। বাঘের বাজার এলাকার ভার্জিন গ্রুপের একটি কারখানায় মালামাল উঠানো -নামানোর জন্য দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন দীর্ঘদিন ধরে।
২০০৩ সালে হঠাৎ একদিন কারখানার মেশিনের ধাক্কায় গুরুতরভাবে আহত হয়ে পা ভেঙে যায় তার। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে সে পা'য়ে ইনফেকশন দেখা দেয়। এতেই ডান পা'য়ের হাঁটু হতে কেটে ফেলতে হয়েছে । এছাড়াও ইনফেকশনের কারণে একটি হাতের তিনটি আঙ্গুল কেটে দেয় ডাক্তার। এরপর থেকে বাম পা'য়ের হাড়েও সমস্যা দেখা দেয়। যদিও সে সময় কারখানা হতে তার চিকিৎসার জন্য খরচ দেয়া হয়েছিল।
তিনি আরো জানান, সংসার চালাতে তো অর্থের প্রয়োজন। এক ছেলেকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনার খরচ চালিয়ে গেছি। এখন আর পারি না। তাই তাকে ওয়ার্কস্ হেলপারের কাজে দিয়েছি। আর ছোট ছেলেটাকে (১৫) একটি পোল্ট্রী খামারে দিয়ে দিছি। আমি নিজে রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৪-৫ শত টাকা পাই। তা দিয়েই কোনমতে সংসার চলে। ছেলেটাকে বিয়ে করাইতে নতুন একটি ঘর দরকার। বনের জমিতে থাকি বলে ঘর করতে বাঁধা আসে।
রাজাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন জানান, আব্দুল জলিলের জীবন সংগ্রাম সত্যিই অনুপ্রেরণার। পঙ্গু হয়েও ভিক্ষাবৃত্তির কাজে যাননি তিনি। ইতোমধ্যে তাকে প্রতিবন্ধীর ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও তার জন্য সরকারী কোন সহায়তার সুযোগ থাকলে দেয়া হবে।
শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম জানান, আব্দুল জলিল যদি ঋণের জন্য আবেদন করে তাহলে তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামছুল আরেফীন জানান, এক পা নিয়েই জীবিকার অন্বেষনকারী আব্দুল জলিল অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রেরনার উৎস। তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।