
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। সরকারের কাছে এই সংকটের সময় এ খাতকে স্বস্তি দিতে আগামী পাঁচ বছর উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (১৩ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এ দাবি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এটি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ, যদি রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর আগামী পাঁচ বছর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশে থাকতে পারে, তবে এই সংকটের সময় এই খাত স্বস্তিতে থাকবে। শিল্প যদি টিকে থাকে, তাহলে রাজস্ব আসবে এবং নতুন কর্মসংস্থান হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি ও সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজিম এবং পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন বিজিএমইএর পরিচালক ব্যারিস্টার শেহরিন সালাম ঐশী।
বর্তমান শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ উৎসে কর রাখার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিবেচনা করবেন বলে আশা প্রকাশ করে ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত আরএমজি সেক্টরের অগ্রযাত্রাকে যেকোনো উপায়ে মসৃণ রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিদায়ী অর্থবছরে (২০২১-২২) ৮৭ টাকা ও ডলারের বিনিময় হার বিবেচনা করে রপ্তানি আয় ৪১ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩ দশমিক ৫৬ লাখ কোটি টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরনের অনুমান অনুসারে ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা উৎসে কর হিসাবে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফারুক হাসান জানান, রপ্তানি আয় আগামী অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিনিময় হার ৯২ বিবেচনা করে ৪৫ বিলিয়ন বা প্রায় ৪ দশমিক ১৪ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থায় উৎসে কর হিসাবে ২ হাজার ৭০ কোটি টাকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক অগ্রগতি বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা যদি রপ্তানি বাড়াতে পারি, তাহলে করের হার না বাড়িয়েও রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব হবে। যদি তা হয়, তাহলে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি উপকৃত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়া বিজিএমইএ সভাপতি নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের পাশাপাশি, নন-কটন আরএমজি পণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক বিদেশ থেকে আসা অপ্রদর্শিত অর্থ ও সম্পদকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে সরকারের কর ক্ষমার পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, সারা বিশ্ব এখন বৈদেশিক মুদ্রার চাপে রয়েছে বিধায় আরএমজি আইটেমের চাহিদা কমছে এবং চাহিদা কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, যদি এই ধরনের বিদেশী মুদ্রা এই ধরনের বিধানের মাধ্যমে আসে, তবে এটি ভালো। আমরা সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তের পাশে থাকবো বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃত্রিম ফাইবার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা হচ্ছে এবং আগামী বছর থেকে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি বাড়বে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই এর সুফল পাবেন।
পোশাক শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বিজিএমইএ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার পর শিল্পের সক্ষমতা ও সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিবেচনা করে শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফারুক বলেন, অনেক কারখানা তাদের ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে শ্রমিকদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করছে এবং এই ধরনের কভারেজ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।
মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে তার দৃঢ় ও গতিশীল নেতৃত্বের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মহামারী চলাকালীন প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করেছেন।
এছাড়া তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের আগামী অর্থবছরের (২০২২-২৩) জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা রাখা একটি ‘সাহসী পদক্ষেপ’।
বিজিএমইএ সভাপতি উল্লেখ করেন, নতুন বাজেটে কর্পোরেট কর হার হ্রাস শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, সীতাকুন্ডুর বিএম ডিপোতে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে আরএমজি শিল্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কারণ এতে আর্থিক ক্ষতি অপেক্ষা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বেশি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অফ-ডক অডিট করার এবং সবকিছুকে কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান।
বিজিএমইএ সভাপতি পোশাক কূটনীতির অংশ হিসেবে ২৯ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত তাদের ইউরোপ সফরের ফলাফলও তুলে ধরেন। সূত্র : বাসস