
হায়দার মোহাম্মদ জিতু ॥ গ্রীক পুরাণের ‘ট্রয়’ যুদ্ধে কাঠ নির্মিত ‘ট্রোজেন হর্সে’ লুকায়িত সৈন্যদল ছিল গ্রীকদের তুরুপের তাস। যাদের লক্ষ্য ছিল রাজা প্রায়ামের দুর্গে প্রবেশ এবং এর ফটক খুলে বাকি সৈন্যদের ভেতরে নেয়া। গ্রীকদের সেই ‘ট্রোজেন হর্স’ ফাঁদকে দুর্গে নিতে রাজাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তারই রাজ্যসভার সদস্যরা।
কালচক্রে সেই ‘পুরাণ ছায়া’ আজ ‘বাংলাদেশ’ নামক জাতি-রাষ্ট্র গঠনের ঐতিহাসিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক রাজনীতিতে দৃশ্যমান।
জাতি রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয়ে বাঙ্গালীর রুট মুক্তিযুদ্ধ। আর এই মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালীকে নেতৃত্বদানকারী এবং সংগঠিতকারী একমাত্র দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যার নেতৃত্বে ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তবে সময়ের স্রোতে জন কয়েকের স্বার্থান্বেষী রোষে এই সংগঠন আজ কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রায় ঢেউহীন ! আর এর কারণ অতি উৎসাহী ক’জনার অস্তিত্ব জাহিরের অসুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
বোধগত হিসেবে দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে অস্তিত্বের যে লড়াই তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং পারস্পারিক সহযোগিতার ভেতর দিয়ে যে লড়াই তাই প্রতিযোগিতা। বর্তমান আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর মাঝে স্থান বিশেষে প্রথমটি অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুরখানাই বেশি।
নেতা থেকে শুরু করে তার ট্যান্ডেলরা নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে বিএনপি-ছাত্রদল-জামায়াত-শিবিরকে দলে ভিড়াচ্ছেন। যাদের দিয়ে নিজ দলেরই অন্য গ্রুপের কর্মীদের হয়রানি করছেন। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলো হারাচ্ছে তাদের বহুমাত্রিক নান্দনিক সৌন্দর্য।
আবার কোথাও কোথাও নিজেদের সন্তানদের বিয়ে-শাদীর অদল-বদল আত্মীয়তায় উপহার দেয়া হচ্ছে নিরাপদ এবং ক্রান্তিকালীন ছাতা। আর লেনদেনের মাপজোখ সম্পর্কে নাইবা বললাম। উদাহরণ প্রসঙ্গে নেত্রকোনার এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের প্রার্থিতা এবং আশ্চর্যজনক হল ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ তার পুত্র 'সজীব ওয়াজেদ জয়ের' তত্ত্বাবধানে যে ইন্টারনেট সুবিধা দিয়েছেন সেটাকে ব্যবহার করে একে অপরকে নাস্তানাবুদ করতেও তাদের জুড়ি নেই।
অথচ বর্তমান জামানার বৃহৎ কলেবরের যোগাযোগ মাধ্যম বা প্রচার মাধ্যম ফেইসবুক একাউন্ট, ফেইসবুক পেইজ, টুইটার, ইমো ইত্যাদিতে আওয়ামী সরকারের উন্নয়নমূলক প্রচার-প্রচারণায় এঁদের ব্যাপক কোন অংশগ্রহণ নেই।
অন্যদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে পেইজ আছে তার প্রতিও তাঁদের বিশেষ কোন গুরুত্বারোপ নেই। অথচ নিজেদের নাম সর্বস্ব এবং রোড ম্যাপহীন পেইজ খুলে আত্মপ্রচারণার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবার অতি উৎসাহী একদল আওয়ামী সরকারের নামে টুকটাক প্রচার-প্রচারণা করছেন এমন অপরিচিত একাউন্ট, পেইজ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করছেন। দলীয় কাজ করছেন এমন ভেবে মাঝে মাঝে হুঙ্কারও ছুঁড়ছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হল নিয়ন্ত্রণহীন এসব মাধ্যম থেকে যদি একেবারে নির্বাচনের প্রাক্কালে 'আওয়ামী অপপ্রচার’ চালানো হয় তবে বিভ্রান্ত জনগণের দায়ভারও কিন্তু তাদের নিতে হবে। কারণ তাদের দেয়া লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার দেখেই সাধারণ জনগণ সেখানে উৎসাহিত হয়েছেন।
আর এইসব কীর্তি-কাহনই আওয়ামী ‘ট্রোজেন হর্সের’ ইঙ্গিত এবং স্পষ্ট এই বহিরাগতরাই আওয়ামী ব্যান্ড-নাম ব্যবহার করে বিক্ষিপ্ত অসংলগ্ন কাজ-কর্ম দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুক্ষ পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।
তবে এর বিশেষায়িত এবং সর্বাধুনিক দিক হল ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা’। যিনি রাজনীতিতে ‘ঠেকে এবং ঠকে’ দুইভাবেই শিখেছেন।
আর এ কারণেই বাঙ্গালী বিশ্বাস করে গ্রীক পুরাণে বর্ণিত রাজা প্রায়ামের মত তো নয়ই বরং ৫৭’এর মীরজাফর-ঘষেটি কিংবা ৭৫’এর মোশতাক গংদের ধারাবাহিক ও আধুনিক সংস্করণ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘নিজে এবং তাঁর দেশ-জনতাকে’ আগলে রাখবেন। কারণ এ ভূখণ্ডের শেকড়গত প্রেমী এবং বড় আওয়ামী লীগার তো তিনিই।
হায়দার মোহাম্মদ জিতু
সাংগঠনিক সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলাদেশ নিউজ আওয়ার-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)